নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল সিটি (বিসিসি) কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকায় অত্যান্ত ঝুঁকিপূর্ণ ৩৪টি বহুতল ভবন চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে- ভবনগুলো ৪ বছর আগে চিহ্নিত করা হলেও ভাঙতে নেওয়া হচ্ছে না কোন উদ্যোগ। এমনকি ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনগুলোতে বসবাসরত মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা থাকলেও নিশ্চুপ রয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। ফলে ভবনগুলোতে মানুষের বসবাস বন্ধ করা যাচ্ছে না। বরং দিনে দিনে এইসব ভবনে বসবাসের রীতি আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক্ষেত্রে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকায় বরিশাল নগরীর বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবাসিক ভবনও রয়েছে। এইসব অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় মধ্যে বসবাস করছে কয়েক শ’ শিক্ষার্থীরা। বিসিসি সূত্র জানিয়েছে, ২০১৫ সালে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ শহরের ৩৪ ভবনকে ঝুঁবিপূর্ণ চিহ্নিত করে। ওই সময় সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এসব ভবন ভাঙতে মালিকদের চিঠিও দিয়েছিল। কিন্তু পরর্তীতে বিষয়টি কার্যকর যায়নি। এই তালিকায় রয়েছে, নগরীর কাউনিয়া প্রধান সড়কে দেড়শ বছরের পুরনো জমিদার মোহন ব্যানার্জীর বাড়ি। ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনে ৪০ বছর ধরে বাস করছে দুটি পরিবার। এ ছাড়া তালিকায় আরও রয়েছে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজের হাবিবুর রহমান ছাত্রাবাস, বিএম কলেজের সুরেন্দ্র ভবন ছাত্রাবাস, বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রী হোস্টেল ও সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের শহীদ আলমগীর ছাত্রাবাস। সাম্প্রতিকালে ঝুঁকিপূর্ণ এসব ভবন ঘুরে দেখা গেছে- প্রতিটিতেই রয়েছে মানুষের বসবাস। এমনকি কোন কোন ভবনে একাধিক ব্যক্তি বিশেষ তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে রয়েছেন। কিন্তু মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে ভবনগুলোতে বসবাস করলেও বাসিন্দারা বলছেন, অন্য কোথাও ঘর ভাড়া করে থাকার সামর্থ্য নেই। যে কারণে বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই বসবাস করতে হচ্ছে। অবশ্য একই কথা জানিয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ ছাত্রাবাসে বসবাসরত শিক্ষার্থীরাও। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অভিব্যক্তি হচ্ছে, ভবনগুলোর অবস্থা এতটাই করুন যে ভূ-কম্পন বা বড় ধরণের ঝড় হলে ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই বিষয়টি সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ ওয়াকিবহাল থাকলেও বিকল্প কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। কিন্তু ঝুঁকির বিষয়টি জানা থাকলেও অর্থনৈতিক কারণে শিক্ষার্থীরাও বাইরে কেথাও ভাড়া থাকতে পারছে না। বরং বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই বসবাস করতে হচ্ছে। এমন বাস্তবতায় নগরবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ভাঙতে সিটি কর্পোরেশনকে দ্রুত পদপেক্ষ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে জনস্বার্থ আন্দোলন সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন কমিটি। এই কিমিটির বরিশাল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কাজী এনায়েত হোসেন শিবলুর ভাষ্য হচ্ছে, তৎকালীন মেয়র আহসান হাবিব কামালের আমলে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ভাঙতে দাবি রাখা হয়েছিল। কিন্তু দেখছি বলে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। ফলে ভবনগুলো এখন আরও অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাড়িয়েছে। দ্রুত এইসব ভবন না ভাঙকে যে কোন সময় ধসে পড়ে প্রাণহানি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অবশ্য বরিশাল সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষও ঝুঁকিপূর্ণ এসব ভবনে প্রাণবিয়োগের আশঙ্কার বিষয়ে ওয়াকিবহাল। এক্ষেত্রে বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিও) খাইরুল আলমের অভিব্যক্তি হচ্ছে, বিগতদিনের কাগজপত্র অনুসারে শহরের হাসপাতাল রোডের বহুতল হ্যাপি নিবাসসহ ৩৪টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। এই বিষয়টি মেয়র সেরনিবাত সাদিক আব্দুল্লাহ’কে অবহিত করা হয়েছে। মেয়র ভবনগুলো ভাঙতে মালিকদের চিঠি দিতে বলেছেন। চিঠি দেওয়ার পরে মালিকরা ভবন সরিয়ে না নিলে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ নগরবাসীর নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ভবনগুলো ভেঙে দেবে।’
Leave a Reply